নালিতাবাড়ী

নালিতাবাড়ীতে জমি দখলের চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে।

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৩০ অগাস্ট ২০২২ , ৭:৫১ পিএম অনলাইন সংস্করণ

নালিতাবাড়ীতে জমি দখলের চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে।



নালিতাবাড়ীতে জমি দখলের চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে।      
নালিতাবাড়ীতে তথ্য গোপন করে কবুলিয়তনামা (বন্দোবস্ত) করে আদালতের ডিক্রীপ্রাপ্ত ও রেকর্ডীয় সম্পত্তি নিজের দাবী করে দফায় দফায় বেদখলের চেষ্টা করছে আবেদ আলী। শুধু তাই নয়, খাজনা-খারিজসহ জমির সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও স্থানীয় শালিশকে উপেক্ষা করে ওই জমি দখলের চেষ্টায় বৃদ্ধা নারীসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখমের অভিযোগও রয়েছে আবেদ আলীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি উপজেলার রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের গাছগড়া গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গাছগড়া গ্রামের পাইখাতলা মৌজায় ওই গ্রামের হাজি লসকর আলী ১৯৮৩ সালের ২০ জানুয়ারি একই গ্রামের মোহাম্মদ আলী ওরফে মাহা’র কাছ থেকে বিআরএস রেকর্ড মূলে বর্তমান ৭০৮ নং দাগের ১৯ শতাংশ জমি সাফকবলা ক্রয় করেন।
অন্যদিকে মোহাম্মদ আলী একই দাগ থেকে ১লা জুলাই ১৯৮৩ সালে কফিল উদ্দিন ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির কাছে ১৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ২২ মার্চ কফিল উদ্দিন ও আনোয়ারা বেগমরে কাছ থেকে ওই ১৫ শতাংশ জমি হাজি লসকর আলী সাফকবলা কিনে নেন।
এদিকে বর্তমান প্রতিপক্ষ আবেদ আলী ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ তার নামে রেকর্ডীয় ২৫ শতাংশ জমি থেকে ১০ শতাংশ জমি লসকর আলী হাজির কাছে সাফকবলা বিক্রি করেন। সবমিলিয়ে সাবেক দাগ নং ২২৪ এবং বর্তমান দাগ নং ৭০৮ অনুযায়ী হাজি লসকর আলীর মোট জমির পরিমাণ দাড়ায় ৪৪ শতাংশে।
কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে সাবেক ২২৪ নং এবং বর্তমান ৭০৮ নং দাগ থেকে ৪০ শতাংশ জমি রেকর্ডমূলে ক্রয় করেন। এ ৪০ শতাংশ জমি থেকেই দুই দফায় ১৯ এবং ১৫ শতাংশ মিলে মোট ৩৪ শতাংশ হাজি লসকর আলী সাফকবলা কিনেন, যা উল্লেখিত ৪৪ শতাংশের অন্তর্ভূক্ত।
উল্লেখ থাকে যে, জয়নাল আবেদীন ১৯৭৬ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহের চতূর্থ সাব জজ আদালতের মাধ্যমে তার অনুকূলে সাবেক ২২৪ নং এবং বর্তমান ৭০৮ নং দাগের ৭৪ শতাংশ জমি ডিক্রীপ্রাপ্ত হন এবং নিজ নামে খারিজ করে নেন। যা পরবর্তীতে ডিক্রীর তথ্য গোপন করে ১৯৭৯ সালে আবেদ আলী তার নামে কবুলিয়াতনামা (বন্দোবস্ত) করে নেন। তথ্য গোপনের বিষয়টি বিআরএস রেকর্ডের সময় কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় নিজ নামে উল্লেখিত দাগের পুরো জমি রেকর্ড করাতে পারেনি আবেদ আলী। তবে জমির ডিক্রীপ্রাপ্ত মালিক জয়নালের কাছে আশ্রিত আবেদ আলী ৭৪ শতাংশের অংংশ থেকে ২৫ শতাংশ জমি নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। পরবর্তীতে ওই ২৫ শতাংশ জমি থেকে ১০ শতাংশ হাজি লসকর আলীর কাছে বিক্রির পর বাকী ১৫ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি করে ভোগদখলে ছিলেন আবেদ আলী। ৪৪ শতক জমিতে মাছ চাষ এবং ফসল আবাদ করে ভোগদখলে ছিলেন হাজি লসকর আলী।
২০১২ সালে হাজি লসকর আলীর নিজ নামীয় এবং ভোগদখলীয় ৪৪ শতাংশ জমি আবেদ আলী নিজের নামে বন্দোবস্ত দাবী করে দখলের চেষ্টা করে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য পর্যন্ত পৌছালে তাদের উপস্থিতিতে ৪০ হাজার টাকা আবেদ আলীকে প্রদান পূর্বক আপোষ করে দেওয়া হয়। এরপর সব স্বাভাবিক চললেও ২০২০ সালে পুনরায় ওই জমি দখলের চেষ্টা করে আবেদ আলী। এতে বাঁধা দিতে গেলে লসকর হাজির স্ত্রী বৃদ্ধা রুমেছা এবং ছেলে এমদাদুল হকসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে ও মারধর করে আহত করে আবেদ আলী গং।
এদিকে সম্প্রতি ওই মামলায় আদালতে চার্জ গঠন করা হলে আবেদ আলী পুনরায় চলতি বছরের ২৯ জুলাই উল্লেখিত ৪৪ শতাংশ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। জমিতে খুঁটি পুঁতে, গাছ লাগিয়ে এবং পুকুরের মাছ ধরে নেয়। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হাজি লসকরের সন্তানেরা ওই জমি উদ্ধারে গেলে আবেদ আলী গং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে আবেদ আলীর বাড়িতে পরপর দুইবার গেলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।