নালিতাবাড়ী

নালিতাবাড়ীতে ট্রলিতে দিনমজুরি করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেল আলিফ

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ৯:০১ পিএম অনলাইন সংস্করণ

নালিতাবাড়ীতে ট্রলিতে দিনমজুরি করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেল আলিফ

নালিতাবাড়ীতে ট্রলিতে দিনমজুরি করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেল আলিফ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দরিদ্র পরিবারের সন্তান আলিফ হোসেন (১০)। প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার দুপুরেও বাবার সঙ্গে ট্রলি থেকে ইট নামাচ্ছিল সে। হঠাৎ বিদ্যালয় থেকে বাবার মোবাইল ফোনে কল এল। জানানো হলো আলিফ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উপজেলায় হয়েছে তৃতীয়। আশপাশের লোকজন সবাই অবাক! এ যেন আঁধার ঘরে চাঁদের আলো! 
শৈশবেই আলিফ বুঝে গেছে দারিদ্র্য কী জিনিস। আলিফের বড় দুই বোনের বিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক কষ্টে। এখন বাবা-মাসহ তিন সদস্যের পরিবারে আলিফের লেখাপড়া চলছে নিজের মনের জোরেই। কিন্তু তিন বেলা ঠিকমতো খেতে হলে বাবাকে সহযোগিতা করা ছাড়া উপায় নেই তাঁর। তাই বাধ্য হয়ে ট্রলিচালক বাবাকে প্রায়ই সহযোগিতা করে থাকে আলিফ। 
নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকেও চমক দেখিয়ে দরিদ্র পরিবারের খুদে এই শিক্ষার্থী পেয়েছে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। শুধু তাই নয়, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়াদের মধ্যে মেধাক্রম অনুসারে আলিফের স্থান হয়েছে তৃতীয়! 
আলিফের পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৬১ জন ট্যালেন্টপুলে এবং ১২৭ জন সাধারণে বৃত্তি পেয়েছে। এদের মধ্য একজন উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের হাতিপাগার গ্রামের ট্রলিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আলিফ হোসেনও। 
আলিফ হাতিপাগার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বৃত্তি পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ছিল ১৪৬। উপজেলা থেকে এ বছর ৬১ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়াদের মধ্যে মেধাক্রম অনুসারে আলিফের স্থান হয়েছে তৃতীয়। উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এমন অসাধারণ ফলাফলে আনন্দিত আলিফের শিক্ষক, পরিবার ও এলাকাবাসী। 
তবে দারিদ্র্যের বাধায় আলিফের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত! কারণ বাবার সঙ্গে কাজ করার কারণে প্রায়ই বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না তার। যদিও এ জন্য মনটা খারাপ থাকে আলিফের। তবুও পড়ালেখাটা চালিয়ে যেতে চায় আলিফ। বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আলিফের। 
নিজের এই সাফল্য নিয়ে আলিফ হোসেন বলে, ‘আমি তো বাবার সঙ্গে ট্রলি থেকে ইট নামাইতাছিলাম। বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিব জানতাম। হঠাৎ স্কুল থাইক্কা কল দিয়া বাবারে জানাইছে আমি বৃত্তি পাইছি। আমার খুব ইচ্ছা বড় হইয়া ডাক্তার হমু আর গরিব মানুষের চিকিৎসা করমু।’ 
আলিফের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘পেটের তাগিদেই কাজে ছেলের সহযোগিতা নেওয়া লাগে। ছেলেটারে প্রাইভেট পড়াইতে পারি নাই। ঠিকমতো স্কুলেও পাঠাইতে পারি নাই। নিজের চেষ্টায় বাপধন এই রেজাল্ট করছে।’ 
হাতিপাগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, ‘আলিফ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাকে জোর করে আমরা স্কুলে নিয়ে আসতাম। আমরাই ফোনে তার রেজাল্ট জানিয়েছি। ছেলেটার পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ। সহযোগিতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে ভবিষ্যতে আলিফ ভালো কিছু করবে।’