নালিতাবাড়ী

নালিতাবাড়ী বিশ্বশান্তি কামনায় শেষ হলো ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ উৎসব।

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২৮ অক্টোবর ২০২২ , ৮:১১ পিএম অনলাইন সংস্করণ

নালিতাবাড়ী বিশ্বশান্তি কামনায় শেষ হলো ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ উৎসব।



শেরপুরে বিশ্বশান্তি কামনায় শেষ হলো ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ উৎসব।
নালিতাবাড়ী(শেরপুর) প্রতিনিধিঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বিশ্বশান্তি কামনায় শান্তিপুর্ণভাবে শেষ হয়েছে খ্রিস্টভক্তদের দুইদিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর বার্ষিক ধর্মীয় তীর্থ উৎসব। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১২ টায় সমাপনি খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘোষণা করেন তীর্থ উৎসবের প্রধান বক্তা ঢাকা মহা খ্রিস্টধর্ম প্রদেশর ভিকার জেনারেল ও বনানীর মেজর সেমিনারীর প্রাক্তন রেক্টর গাব্রিয়ল কোরাইয়া। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের ভিকার জেনারেল রেভারেন্ড ফাদার শিমন হাচ্চা তীর্থ উৎসবের উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন।
সুত্র জানায়, এখন থেকে ১০৫ বছর আগে ১৯১৭ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরে মা মারিয়া ৩ জন ছেলে মেয়ের কাছে দেখা দিয়েছিলেন। মা মারিয়ার দেখা পেয়ে তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। পরে ওই বিশ্বাসীর সংখ্যা বেড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশেী খ্রিস্টভক্তরা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারী সাধু লিও এর খ্রিস্টধর্মপল্লীতে পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৯৮ সালে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান স্থাপন করেন। স্থাপনকাল থেকেই ভিন্নভিন্ন মুলসুরে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়। করোনা ভাইরাসের মহামারীর ধকল কাটিয়ে এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হলো তীর্থ উৎসব। এবারে প্রায় ৩০ হাজার খ্রিস্টভক্ত নরনারী অংশগ্রহন করেন বলে আয়োজকরা জানান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসব শুরু হয়। রাত ৮ টায় মোমবাতি জ্বালিয়ে তীর্থযাত্রীরা আলোক শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহন করেন। নিজেদের পাপ মোচন করতে মোমবাতি জ্বালিয়ে হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তরা প্রায় দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম করে ৪৮ ফুট উচু মা মারিয়ার মুর্তির সামনে বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নৃত্যগীত, নিরাময়, গীতিআলেখ্য ও নিশিজাগরণ পালন করেন। শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় জীবন্ত ক্রুশের পথ। এতে কিভাবে যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা বাস্তবে দেখানো হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারী যুবক যুবতীসহ খ্রিস্টভক্তরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বেলা ১২ টার সময় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধান বক্তা গাব্রিয়েল কোরাইয়া।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা গাব্রিয়েল কোরাইয়া বলেন, বিশ্বে এখন মারামারি, অশান্তি ও যুদ্ধ লেগে আছে। মানুষ অশান্তিতে আছেন। তাই আমরা বিশ্ববাসীর শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে আমরা ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি। দুর দুরান্ত থেকে আমরা পুণ্যের আশায় তীর্থযাত্রায় অংশ গ্রহন করেছি। এখান থেকে নিজ গৃহে ফিরে তীর্থের শিক্ষা যাতে আমাদের খ্রিস্টিয় জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে সুন্দর আদর্শ জীবন গঠন করি। এখানে তীর্থ যাত্রীরা এসে আধ্যাত্বিক জ্ঞান লাভ করায় এজন্য তিনি খ্রিস্টভক্তদের সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার আহবান জানান তিনি।
তীর্থযাত্রী শিক্ষার্থী ডালিয়া চিসিম বলেন, আমি টাংগাইলের মধুপুর থেকে বারমারী ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসবে অংশ গ্রহন করে মা মারিয়ার প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। তিনি যেন আমাদের মনোবাসনা পুরন করেন। অপর তীর্থযাত্রী নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি এলাকার সুবাশ দফো বলেন, ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানে মানত করে সফলতা পেয়েছি। তাই সেই মানত দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। এখানে আমরা শান্তিপুর্ণভাবে উৎসব উদযাপন করতে পেরেছি।
তীর্থ উৎসবের নিরাপত্তা বিষয়ক সমন্বয়ক রেভারেন্ড ফাদার ফিদেলিস নেংমিনজা বলেন, আমরা প্রশাসনিকভাবে সন্তোষজনক নিরাপত্তা পেয়েছি। তীর্থযাত্রীরা নির্বিঘেœ অনুষ্ঠান পালন করতে পেরেছেন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবকসহ নিরাপত্তায় নিয়োজিতের ধন্যবাদ জানান তিনি।
তীর্থযাত্রার সমন্বয়ক রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বনোয়ারী বলেন, সারাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তরা করোনা পরবর্তী সময়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ফাতেমা রাণীর ২৪ তম তীর্থ উৎসব পালন করেছেন। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবারের তীর্থ উৎসবের মুলসুর ছিল মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণকর্মে মা মারিয়া।
এদিকে, ফাতেমা রাণীর বার্ষিক তীর্থ উৎসব উপলক্ষে গারো পাহাড় সাজে বর্ণিল সাজে। তীর্থস্থানের পাশে মাঠে বসে বাহারি জিনিসপত্রের দোকান। এতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ কেনাকাটা করেন।
খ্রিস্টভক্তদের তীর্থ উৎসবে এসে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন, নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবুবকর সিদ্দিক, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, সাবেক ট্রাইবাল চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খ্রিস্টভক্তদের সার্বিক খোঁজ খবর নেন।