নালিতাবাড়ী

কোর্ট ম্যারেজ কি এবং কিভাবে করতে হয়?তালাক দেওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি কি?দেনমোহর কি এবং পরিশোধের পদ্ধতি কি?

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ১৩ মার্চ ২০২২ , ৯:৪০ পিএম অনলাইন সংস্করণ

কোর্ট ম্যারেজ কি এবং কিভাবে করতে হয়?তালাক দেওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি কি?দেনমোহর কি এবং পরিশোধের পদ্ধতি কি?



কোর্ট ম্যারেজ কি এবং কিভাবে করতে হয়?
তালাক দেওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি কি?
দেনমোহর কি এবং পরিশোধের পদ্ধতি কি?
⛔ আমাদের দেশে এখনও অধিকাংশ মানুষ বিবাহ, মোহরানা এবং তালাক সম্পর্কে ভুল ধারনা পোষণ করেন। সাধারণ মানুষ বিবাহ ও মোহরানা নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো পোষন করেন এই বিষয়ে আইন কি বলে চলুন তা জেনে নেই।
⛔ মুসলিম বিবাহ:
বিবাহের আরবি শব্দ হলো ‘নিকাহ’। ইসলামে বিবাহ হলো একটি দেওয়ানি চুক্তি এবং বিবাহের অন্যতম দুইটি প্রধান শর্ত হলো এক পক্ষ কর্তৃক প্রস্তাব প্ৰদান এবং অন্য পক্ষ কর্তৃক প্রস্তাব গ্রহণ। মুসলিম বিবাহ প্রাপ্ত বয়স্ক দুই জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষীর উপস্থিতিতে সম্পাদন করতে হয়। 
মুসলিম আইনে সাবালকত্ব বা বয়ঃসন্ধি বিবাহের যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ের বিয়ের বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছরে নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখিত বয়সের চেয়ে কম বয়সে ছেলে বা মেয়ের বিবাহ হলে বিবাহটি বৈধ তবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
⛔ মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন :
মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন, ১৯৭৪ এর ৩ ধারা অনুযায়ী মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধক নিজেই যদি বিবাহ সম্পাদন করেন তাহলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই বিবাহ নিবন্ধন করবেন। তবে অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিবাহ সম্পাদিত হয়ে থাকলে, বর বিয়ে সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধকের কাছে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিবেন। বিবাহ নিবন্ধন না করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
⛔ কোর্ট ম্যারেজ:
প্রচলিত অর্থে কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে। এ হলফনামাটি ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এটি বিয়ের ঘোষণামাত্র। অর্থাৎ এ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে, এ মর্মে ঘোষণা দেয় । কেউ চাইলে বিয়ে সম্পাদন ও নিবন্ধনের আগে / পরে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিতে পারে।
⛔ মোহরানা ও তালাক নিয়ে আইনের বিধান:
আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে- যদি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়া হয় তাহলে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। 
স্ত্রী তালাক দিলেও স্বামীকে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী তালাক প্রদানের পর মোহরানা, ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ ও বকেয়া ভরণপোষণ (যদি থাকে) এর জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। 
স্ত্রী যদি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চান তাহলে তখন দেখতে হবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কিনা, যদি ১৮ নম্বর কলামে ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে খুব সহজেই মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর বিধান অনুসরণ করে নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।
তবে ক্ষমতা প্রদান করা না থাকলে, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ এর ২ ধারায় উল্লেখিত ৯ টি কারণের এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।
এছাড়াও আরো ২ভাবে স্ত্রী কর্তৃক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যায়, একটি হলো খুলা তালাক ও অপরটি হলো মুবারাত।
খুলা তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীকে তালাকের প্রস্তাব প্রদান দেন এবং স্বামী উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীকে প্রতিদান দেন। সাধারণত স্ত্রী প্রতিদানস্বরূপ সম্পূর্ণ বা আংশিক মোহরানার দাবি পরিত্যাগ করে থাকেন।
মুবারাত হচ্ছে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই বিবাহ বিচ্ছেদ চায়, উভয়ে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তির মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো।