নালিতাবাড়ী

নালিতাবাড়ীতে শহীদ নাজমুল আহসানের স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত।

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৬ জুলাই ২০২২ , ৩:৫১ পিএম অনলাইন সংস্করণ

নালিতাবাড়ীতে শহীদ নাজমুল আহসানের  স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত।



নালিতাবাড়ীতে শহীদ নাজমুল আহসানের  স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত। 

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী সেজুঁতি বিদ্যানিকেতনে ৬ জুলাই বুধবার শহীদ নাজমুল আহসানের মৃত্যু বার্ষীকিতে – মুক্তিযুদ্ধের ত্রয়ী নক্ষত্র শহীদ নাজমুল আহসান শহীদ মোফাজ্জল হোসেন শহীদ আলী হোসেনের স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়। 
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ নাজমুলের খালাতো বোন কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা রোজিনা তাসমিন। 
 স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেজুঁতি বিদ্যানিকেতন এর প্রিন্সিপাল মুনীরুজ্জামান। 
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নাজমুল আহসানের ছোট ভাই সাদরুল আহাসান মাসুম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নালিতাবাড়ি কৃষি অফিসার আলমগীর কবির,জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সরকার গোলাম ফারুক , সিনিয়র সাংবাদিক এম হাকাম হীরা।   
 
 প্রিয় অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, স্বাধীন বাংলা নিউজ ২৪ ডটকম এর প্রকাশক সম্পাদক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক ফারুক আহমেদ বকুল। 
এছাড়াও অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নাজিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন সহ আরও প্রমুখ।       
 সঞ্চালনায় ছিলেন ফরিদ আহাম্মদ।    
     
নাজমুল আহসানের কিছু তথ্য.. 
শেরপুর জেলার অন্যতম বীর, নালিতাবাড়ির অলিখিত বীরশ্রেষ্ঠ, অপারেশন কাটাখালীর নায়ক স্বাধীনতার পদকপ্রাপ্ত   নাজমুল আহসানের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ জানুয়ারি, নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের বরুয়াজানী গ্রামে। বাবা মরহুম সেকান্দর আলী তালুকদার ছিলেন পেশায় শিক্ষক, মা নুরজাহান বেগম তালুকদার ছিলেন গৃহিণী। বাবা মা’র ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন নাজমুল । সে জন্য তিনি পরিবার ও এলাকার সবার আদরের ছিলেন। শহীদ নাজমুল আহসান শহীদ হন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত, অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৭ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক ‘স্বাধীনতা পদক’ (মরণোত্তর) পেয়েছেন। শেরপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ এন এম নাজমুল আহসান। ২৩ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজমুলের পরিবারের হাতে এ পদক তুলে দেন।
Girl in a jacket
১৯৬৫ সালে তিন বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদে ভর্তি হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে ওই সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ৮ মে ভারতের তুরার রংনাবাক অরণ্যে এক মাসের গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন নাজমুল। পরে ১১নং সেক্টরের অধীনে ১নং কোম্পানির ১৩৯ জন প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধার দল নিয়ে মাচাংপানিতে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তার কমান্ডে থাকা দলটি ‘নাজমুল কোম্পানি’ নামে পরিচিতি পায়। দলটি বেশ কয়েকটি সফল অপারেশনও পরিচালনা করে।
৪ জুলাই ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে নাজমুল হানাদারদের ঠেকাতে ঝিনাইগাতির কাটাখালী ব্রিজ ধ্বংসের অপারেশন শুরু করেন। ৫ জুলাই রাতে ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে সফল অভিযান শেষে রাঙ্গামাটি গ্রামের কৃষক নঈমদ্দিনের বাড়িতে বিশ্রামের জন্য আশ্রয় নেন।
৬ জুলাই ভোরে স্থানীয় এক রাজাকারের সংবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানি বাহিনী নঈমুদ্দিনের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ সময় নাজমুল আহসান তার সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধাদের বিল সাঁতরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর নিজে শত্রুর মোকাবিলা করতে ব্রাশ ফায়ার শুরু করেন। একটি বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে নাজমুল চেষ্টা করেন ডিফেন্স ফায়ার করতে করতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার।
এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষের এসএমজির একটি গুলি নাজমুলের বুকে বিদ্ধ হয়। তিনি লুটিয়ে পড়েন বিলের পানিতে। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এসে শহীদ হন তার চাচাত ভাই মোফাজ্জল ও ভাতিজা আলী হোসেন।
দেশ স্বাধীনের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসানের স্মৃতি রক্ষায় ১৯৭২ সালে নালিতাবাড়ীতে “নাজমুল স্মৃতি কলেজ” প্রতিষ্ঠিত হয যা বর্তমানে সরকারি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের এই কৃতি শিক্ষার্থীর নামে একটি ছাত্রবাস নির্মাণ করেন। শহীদ নাজমুল আহসান জাতির গর্ব, নালিতাবাড়ির গর্ব।