বাংলাদেশ

সাবধান মেয়েরা সেপটিফিন রাখছে হাতে

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২০ মার্চ ২০২৩ , ২:৪৩ পিএম অনলাইন সংস্করণ

সাবধান মেয়েরা সেপটিফিন রাখছে হাতে

সাবধান মেয়েরা সেপটিফিন রাখছে হাতে

ভারতের প্রায় প্রতিটি নারীই বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। বাস, পাবলিক প্লেস বা লিফটে ইচ্ছাকৃত গায়ে হাত দেওয়ার মত অভিজ্ঞতার স্বীকার প্রায় সবাই। আর তাই হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সেফটিপিনসহ বেশ কিছু ছোট ছোট কার্যকরী টুল ব্যবহার করছে দেশটির নারীরা।নারীরা জানায়, আমরা অনেকেই আমাদের নখ লম্বা এবং ধারালো রাখি যাতে কেউ গায়ে হাত দিলে তাকে আঁচড় দেয়া যায়। অনেক আবার সূক্ষ্ম হিল ব্যবহার করে থাকেন। এসবের মধ্যে সেফটিপিন অন্যতম।
কয়েক মাস আগে ভারতের বেশ কয়েকজন নারী টুইটারে স্বীকার করেছেন, তারা সবসময় তাদের সাথে একটি সেফটিপিন বহন করেন যা এইধরণের বিব্রতকর ঘটনা মোকাবেলার জন্য তাদের পছন্দের অস্ত্র।
বাসে যৌন হয়রানির স্বীকার দীপিকা শেরগিল বলেন, তিনি অফিসে যাতায়াতের জন্য বাসে উঠলে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটত। এর জন্য তিনি সেফটিপিন রাখা শুরু করে।
তিনি বলেন, বাসে তার দ্বিগুণ বয়সী এক লোক প্রায়ই পাশে এসে দাঁড়াতেন, ঝুঁকে পড়তেন, আমার পিঠে স্পর্শ করতেন এবং ড্রাইভার যখনই ব্রেক করতেন তখনই আমার ওপর পড়ে যেতেন। কিন্তু এক সন্ধ্যায় তিনি অতিরিক্ত কিছু করে ফেলেছিলেন যা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। তখন আমি অপবিত্র বোধ করছিলাম। বাড়িতে পৌঁছে আমি সত্যিই অনেকক্ষণ ধরে গোসল করেছি। এমনকি আমি আমার মাকেও বলিনি আমার সাথে কি হয়েছে।
সেই রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। পরে আমি প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করি। আমি তার শারীরিক ক্ষতি করতে চেয়েছিলাম, তাকে আঘাত করতে চেয়েছিলাম, তাকে আমার সাথে এটি করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলাম।
পরের দিন সকালে আমি সেফটিপিন নিয়ে বাসে উঠি। তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়ানোর সাথে সাথে, আমি আমার আসন থেকে উঠে যাই এবং আমার হিল দিয়ে তার পায়ের আঙ্গুলে আঘাত করি। এরপর আমি তার কপালে খোঁচা দেওয়ার জন্য পিনটি ব্যবহার করি এবং দ্রুত বাস থেকে বেরিয়ে যাই।
মিসেস শেরগিলের এই ঘটনাটি বিপজ্জনক হলেও ভারতে এরকম ঘটনা বিরল নয়।
তার এক সহকর্মী এমনি একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একজন ব্যক্তি বারবার তাকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কোচিন এবং বেঙ্গালুরু এর মধ্যে একটি বাসে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রথম দিকে আমি ভেবেছিলাম এটা দুর্ঘটনাবশত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি যে তিন ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করছেন। সেদিন আমার সাথে থাকা সেফটিপিন আরও অপ্রীতিকর কিছুর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিল।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বেশিরভাগ মহিলা ভয় এবং লজ্জাকে শ্লীলতাহানিকারীদের উৎসাহের কারণ বলে মনে করেন।
২০২১ সালের ১৪০ টি ভারতীয় শহরের একটি অনলাইন সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ মহিলা গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন, তবে মাত্র ২ শতাংশ পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। ৫২ শতাংশর বেশি নারী বলেছেন যে তারা নিরাপত্তার কারণে শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সেফটিপিন নামক একটি সামাজিক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা কল্পনা বিশ্বনাথ বলেন, যৌন সহিংসতার ভয় প্রকৃত সহিংসতার চেয়ে নারীর মানসিকতা এবং গতিশীলতাকে বেশি প্রভাবিত করে। এটি নারীর জীবনে প্রকৃত শ্লীলতাহানির চেয়ে অনেক গভীর প্রভাব ফেলে। মহিলাদের হয়রানি শুধুমাত্র একটি ভারতীয় সমস্যা নয়, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।
তিনি বলেন, রাজধানী দিল্লির বাসগুলোতে প্যানিক বোতাম এবং সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। মহিলা চালকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, মহিলা যাত্রীদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বাসগুলোতে মার্শাল মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ অ্যাপ এবং হেল্পলাইন নম্বরও চালু করেছে যাতে মহিলারা সাহায্য চাইতে পারেন।
কল্পনা বিশ্বনাথ মনে করেন, এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হল এই সমস্যাটি সম্পর্কে আমাদের আরও কথা বলতে হবে। এটি না হওয়া পর্যন্ত, মিসেস শেরগিল ও তার সহকর্মী এবং লক্ষ লক্ষ ভারতীয় মহিলাকে তাদের সেফটিপিনগুলোকেই সাথে রাখতে হবে।