শেরপুর

শেরপুরের নকলায় সরকারি রাস্তা বেদখলমুক্ত, দুই গ্রামের মানুষের কষ্ট লাগব

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২০ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:০৩ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরের নকলায় সরকারি রাস্তা বেদখলমুক্ত, দুই গ্রামের মানুষের কষ্ট লাগব

মেহেদী হাসান শামীম,
শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের নকলায় কয়েক যুগ আগে দখল হওয়া সরকারি রাস্তা বেদখলমুক্ত করলেন প্রশাসন। এতে অবৈধ দখল থেকে সরকারি রাস্তা উদ্ধার করায় দুইটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের লোকজন যাতায়াতের পথ খোঁজে পেলেন। রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী মৌজার পোলাদেশী পশ্চিমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেদখল মুক্ত করে উদ্ধার করে সরকারি রাস্তা। এলাকার শতাধিক ভুক্তভোগী পরিবারের কষ্ট লাগব হওয়ায় খুবই আনন্দিত। এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

রোববার দুপুরে বানেশ্বরদী মৌজার পোলাদেশী পশ্চিমপাড়া এলাকার ১০২৫ নং দাগের সি.এস এবং আর.ও.আর ভুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ডিয় রাস্তাটির দুই পাশের চারজন অবৈধ দখলদারসহ দুই গ্রামের অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগীর উপস্থিতিতে জমির সীট (ম্যাপ) মোতাবেক ১০২৫ নং দাগের সম্পূর্ণ জমি পরিমাপ করে রাস্তা চিহৃত করে লাল পতাকার খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

এসময় উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রনি কুমার ভৌমিক, উপ-সহকারী ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা (নায়েব) হযরত আলী, সরদার আমিন (সার্ভেয়ার) রহুল আমিন, নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, সহ-সভাপতি খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী রাজন ও দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজাসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।

বেদখলে রাখা জমির মালিক ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা বেশ আগে এখানে একটি রাস্তা দেখেছিলাম। কিন্তু বাবা ও চাচারা রাস্তাটি কেন কেটে ফেলেছিলো তা জানা নেই। এই রাস্তাটি সরকারের সি.এস এবং আর.ও.আর ভুক্ত ছিলো তা জানতাম না। এখন আমরা জেনেছি, তাই এই সরকারি রাস্তার জমি ছেড়ে দিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এদিক দিয়ে পুনরায় রাস্তা হলে পোলাদেশী পশ্চিমপাড়া এলাকার ও বানেশ্বরদী খন্দকারপাড়া (ভূরদী) এলাকার লোকজনের অবর্নণীয় কষ্ট লাগব হবে ও খুব উপকারে আসবে। বিশেষ করে বানেশ্বরদী খন্দকারপাড়া (ভূরদী) এলাকার মানুষ লাভবান হবে।

সরকারি জমি বেদখলে রাখা অন্য আরো দুইজন আলতাফ আলী ও খুশু মিয়া জানান, আগে বানেশ্বরদী খন্দকারপাড়া (ভূরদী) এলাকার কোন বাড়িতে যেতে হলে পায়ে হেঁটে বা বাইসাইকেল ও মোটর সাইকেল ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। ফলে তাদের উৎপাদিক কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী হাট-বাজারে নিয়ে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন না। এই রাস্তাটি হলে ওই এলাকার লোকজনসহ আমরা সবাই রিক্সাসহ ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন যানবাহন দিয়ে যাতায়াত করতে পারব। তাছাড়া আমাদের উৎপাদিত সকল পণ্যসামগ্রী বাজারে নেওয়া সহজ হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পাব। তাই জনস্বার্থে কৃষি প্রধান এলাকার এই রাস্তাটি পুনরায় নির্মাণ করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।

স্থানীয় কৃষক হাকলিজুর, ইব্রাহীম, জিন্নত আলী, আলাল মিয়া, ওসমান আলী, রাউফুর রাহিম, আমীর আলী, লিয়াকত হোসেন, জবেদ আলী, আব্দুস সালাম, আবুল কালাম, মোকলেছুর রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিক, ছাইদুল হক, ইসমাইল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, বাহার মিয়াসহ অনেকে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, আমার এতাদিন রাস্তার অভাবে একপ্রকার অবরোদ্ধ ছিলাম; আজ থেকে হয়তোবা মুক্ত হলাম। রাস্তাটি হলে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আমরা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারব। তাই এই রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মান করে দেওয়ার জোরদাবী জানান কৃষকসহ এলাকাবাসী।

উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রনি কুমার ভৌমিক ও উপসহকারী ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা (নায়েব) হযরত আলী জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন-এঁর নির্দেশক্রমে এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ-এর পরামর্শে তারা গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে রাস্তার অবস্থান জেনেছেন। তারা বলেন, আজ রোববার দুপুরে বেদখলে রাখা জমির মালিক ইয়াকুব আলী, আলতাফ আলী ও খুশু মিয়াসহ এলাকার গন্যমান্য ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে জমির সীট (ম্যাপ) মোতাবেক ১০২৫ নং দাগের সম্পূর্ণ জমি পরিমাপ করে রাস্তা চিহৃত করে লাল পতাকার খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। এতে করে এলাকার সবাই খুশি বলে তারা জানান। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনে এলাকাবাসী সার্বিক সহযোগিতা করায় সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এবিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন-এর নির্দেশক্রমে বেদখলে থাকা সরকারি জমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে সার্ভেয়ার রনি কুমার ভৌমিক ও উপ-সহকারী ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা (নায়েব) হযরত আলী-কে বেদখলে রাখা জমির মালিক ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে জমির সীট (ম্যাপ) মোতাবেক ১০২৫ নং দাগের সম্পূর্ণ জমি পরিমাপ করে রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান, সরকারি জমিসহ সরকারের যেকোন সম্পদ রক্ষা করার নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী মৌজার পোলাদেশী পশ্চিমপাড়া এলাকাস্থ ১০২৫ নং দাগের সি.এস এবং আর.ও.আর ভুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ডিয় রাস্তাটি বেদখল মুক্ত করা হয়েছে। এলাকাবাসীর চাহিদা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই রাস্তাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জনস্বার্থে পুনরায় নির্মান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।