শেরপুর

শেরপুরের ছানার পায়েস ছেলে-বুড়ো সবার পছন্দ

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ১৯ মার্চ ২০২২ , ১২:১২ এএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরের ছানার পায়েস ছেলে-বুড়ো সবার পছন্দ



শেরপুরের ছানার পায়েস ছেলে-বুড়ো সবার পছন্দ
হাফিজুর রহমান লাভলু,শেরপুর :
শেরপুরের ছানার পায়েসের কদর সারা দেশজুড়ে। বিচিত্র খাবারের মধ্যে শত বছরের সুখ্যাতি আছে শেরপুরের এই ছানার পায়েসের। উৎসব আয়োজনে ভোজন রসিক বাঙালির খাদ্য তালিকায় ছানার পায়েস বহন করে এক বিশেষ ঐতিহ্য। দুগ্ধজাত আদর্শ এ খাবার ছেলে-বুড়ো সবার পছন্দ।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ১শ’ বছর আগে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম এ পায়েস তৈরি হয়। সেসময়কার জমিদাররা ঘোষপট্টিতে বানানো ছানার পায়েস বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। এছাড়া আত্মীয় স্বজন কিংবা অন্য জমিদারের কাছে উপঢৌকন হিসেবেও তারা এই পায়েস পাঠাতেন।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডা, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, টাংগাইলের চমচম, জামালপুরের মিল্লিসহ দেশের একেক এলাকা একেক খাবারের জন্য বিখ্যাত। এরকম আরেকটি খাবার হলো শেরপুরের ছানার পায়েস।
স্থানীয়রা জানান, বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, অতিথি আপ্যায়নসহ সবখানেই ছানার পায়েসের মর্যাদা সবার ওপরে। এসব অনুষ্ঠানে ছানার পায়েস ছাড়া জমেই না।
শেরপুর শহরের হোটেল কারিগর নবী হোসেন বলেন, প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় দুধ গরম করে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি তৈরি করা হয়। গুটিগুলো পরে চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে অল্প আচে কিছুক্ষণ তাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় মুখরোচক ছানার পায়েস।
পৌর শহরের নিউমার্কেটের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের কালিপদ ঘোষ দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবত মিষ্টি তৈরীর কাজ করেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরী করা হয় ছানার পায়েস, তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যপক।
অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক বাপ্পি দে জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ছানার পায়েস সাড়ে ৩শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে।
হোটেল হৃদয়ের মালিক লুৎফর রহমান বলেন, আমি ২০ বছর যাবত ছানার পায়েস বিক্রি করছি। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষদের জন্য কিংবা রোগী দেখতে গেলে তালিকায় অবশ্যই ছানার পায়েস থাকবেই। এর চাহিদা আছে। তবে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভন্ডার, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতাঁরা মিষ্টান্ন ভান্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লব মিষ্টান্ন ভান্ডারে ছানা পায়েস পাওয়া যায়।
শেরপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা ছানার পায়েসের ব্যাপারে বলেন, বিশেষ আয়োজনে খাবারের তালিকায় অন্যতম আকর্ষণ হলো বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার। আর এসব খাবারের মধ্যে ছানার পায়েস অন্যতম। আর শেরপুরের ছানার পায়েসের কদর দেশজুড়ে।
শেরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, যুগ যুগ ধরেই বাঙালির অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির প্রচলন। আর কোনও শুভ কাজে মিষ্টিমুখ করানো বাঙালি সংস্কৃতি। তবে মিষ্টির মধ্যে অন্যতম ‘ছানার পায়েস’। আমাদের শেরপুরের ছানার পায়েসের খ্যাতি দেশজুড়ে।
শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, দুধ থেকেই তৈরী করা হয় ছানার পায়েস। শেরপুরের ছানার পায়েস দেশসেরা। বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঘুরতে এলে শেরপুরের ছানার পায়েস সাথে নিয়ে যাবেই। বিশেষ করে গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, রাজার পাহাড়, পানিহাতা, অর্কিডে বেড়াতে এসে ছানার পায়েসের স্বাদ নিতে ভুলেন না ভোজন রসিকরা।