নালিতাবাড়ী

শেরপুরে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি।

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ১০ মার্চ ২০২৩ , ৩:৫৭ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি।



শেরপুরে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি।
উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এতে করে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনে খরচ হয় করপোরেট পর্যায়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট খামারি পর্যায়ে এই খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মতো। কিন্তু ঢাকাসহ সারাদেশে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
দ্বিগুণ দামে মুরগির বিক্রির দায় নিতে চায়না কোন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তাই আবারও ব্যবসায়ীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করলেন। এদিকে, অসাধু ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী এবং ফড়িয়াদের কারসাজির কারণে ভোক্তাকে দ্বিগুণ দাম দিতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য উঠে আসে।
ব্রয়লার মুরগির বর্তমান বাজার দর এবং কিভাবে বাজারে দাম উঠানামা করে সেই বিষয় জানতে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। পোল্ট্রি মুরগির উৎপাদনকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ছোট খামার মালিক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ক্যাবের প্রতিনিধিরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। পোল্ট্রি ফার্মের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এটা সর্বোচ্চ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই তা ২৫০ কিংবা ২৬০ টাকায় বিক্রি হতে পারে না। তবে ছোট খামার মালিকরা জানিয়েছেন, রাতের বেলার ‘অদৃশ্য এসএমএস’ নিয়ন্ত্রণ করে মুরগির বাজার।
এ কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও খুচরা খামার মালিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বাগবিতন্ডা ও একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা ছিল সভায়। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, এভাবে বাজার চলতে পারে না। আপনারাই বলছেন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ টাকা। তাহলে এই মুরগি কিভাবে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়? এটা কোনোভাবেই হতে পারে না, হতে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, আসলে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কত হতে পারে তা নিরূপণ করবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া বাজারে মুরগির মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখবে সরকার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই বাজারে মুরগির দাম বাড়ছে। এসএমএসের মাধ্যমে কখনো মুরগির দাম নির্ধারণ করা যাবে না।
সভায় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। পরে সভায় উপস্থিত থাকা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়। সুমন হাওলাদার আরও বলেন, রাতের বাজারগুলোতে করপোরেট কোম্পানির লোক থাকেন। তারা করপোরেট কোম্পানিকে রাতেই দাম জানিয়ে একটি এসএমএস করেন। পরে সকালে করপোরেট কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএস মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। তাছাড়া কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ আছে। সেখান থেকেও এসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই এসএমএসর মাধ্যমে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সেই দামটিই বাজারে বাস্তবায়ন হয়। করপোরেট কোম্পানি কম দামে দিতে বললে সবাইকে কম দামে বিক্রি করতে বলা হয়। আবার বেশি দাম দিলে সবাইকে বেশি দামে বিক্রি করতে বলা হয়। সুমন হাওলাদার বলেন, যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেয়। আর যখন আমাদের হাতে পণ্য থাকে না, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমাদের হাতে পণ্য নেই, এখন মুরগির কেজিপ্রতি দাম ২৫০ টাকা। সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানির হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় মুরগির বাজার এখন অস্থিতিশীল।
সভায় ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিদ হাসান বলেন, বর্তমান প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৩০ টাকার মতো। এটা কখনোই ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতে পারে না। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কারসাজির কারণে মুরগির দাম বাড়ছে। তবে ওই সময় কাপ্তান বাজার মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুল্লাহ বলেন, আপনারা যেটা বলছেন এটা ঠিক নয়। প্রতিদিন বাজারে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর কোন ভাউচার কিংবা রসিদ কিছুই দেওয়া হয় না। কাজী জাহিদ হাসান বলেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়ায় অধিকাংশ ছোট খামারি ক্ষতিতে পড়েছে। অনেকে খামার বন্ধ করে রেখেছে এবং বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরের মে, জুন জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার কোনো চাহিদা ছিল না। এর জন্য বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাচ্চার দাম যখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল, তখন কিন্তু আমরা বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি করেছি। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্রয়লারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে ব্রয়লারে মূল্য বেড়েছে। তাই খামারিরা এখন লাভে ব্রয়লার বিক্রি করছে। এখন ব্রয়লারের বাচ্চার চাহিদাও বেড়ে গেছে। বাচ্চা উৎপাদনে খরচ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়। আবার বাচ্চার উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে। তখন মুরগির দামও কমে আসবে। এটা একদিনে হবে না। আস্তে আস্তে হবে।
প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির জন্য কী পরিমাণ খরচ হয়, জানতে চাইলে কাজী জাহিদ হাসান বলেন, খুচরা খামারি পর্যায়ে এই খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে আমরা যারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুরগির উৎপাদন করি, তাদের ২০ টাকার মতো কমে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সিন্ডিকেট, করপোরেট গ্রুপ ও অদৃশ্য যে এসএমএসর কথা বলা হচ্ছে, আমরা তা খতিয়ে দেখব। আমাদের কাছে আগেও এই বিষয়গুলো এসেছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র খামারিরা করপোরেটদের সঙ্গে পারছেন না। তাদেরকেও টিকিয়ে রাখতে হবে। ১৪০ টাকার মুরগি কেন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে কেউ জড়িত থাকলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে দোকানে ব্রয়লার মুরগি কত করে কেনা হয়েছে এবং কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঝুলিয়ে রাখতে হবে।