শেরপুর

স্মৃতির পাতায় মুক্তি যুদ্ধ ‘৭১.(৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৩ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:৪৭ পিএম অনলাইন সংস্করণ

স্মৃতির পাতায় মুক্তি যুদ্ধ ‘৭১.(৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ



স্মৃতির পাতায় মুক্তি যুদ্ধ ‘৭১.(৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। 
স্মৃতির পাতায় মুক্তি যুদ্ধ ‘৭১.
(৪)
আমি ছোট একটা গাছের ডাল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে খবর পেলাম মিলিটারীরা চলে গেছে। আমিও বাড়ীর দিকে রওনা করলাম। মা,বাবা, বড় ভাইয়েরা মিলিটারী আসার আগেই বাড়ী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাড়ীতে এসে দেখলাম আমার শিক্ষক পিতা পোড়া বাড়ীর ভিটাতে দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন। আর্মিরা চলে যাবার পর পাড়া- প্রতিবেশীরা এসে বাড়ীর সামনের পুকুর থেকে পানি এনে আগুন নিভানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো।কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিলো না। কারণ পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো। খড়ের টিবি গুলো তখনও দাউদাউ করে জ্বলছিলো। ঘরের কোন জিনিস পুড়তে বাকী ছিলো না। আমাদের প্রচুর ধান হতো। ধানের গোলা পুড়ে অঙ্গার হয়ে ছিলো। গ্রামের মানুষ খুব চেষ্টা করছে ধান গুলো বাচাতে কিন্তু পারে নাই। আমাদের শরীক ছিলো তিনটা। আমাদের চারটা চৌচালা টিনের ঘর, আমার জেঠার দুইটি টিনের ঘর এবং আমার জেঠাতো ভাইয়ের একটা চৌচালা টিনের ঘর। আর রান্না ঘর,গোয়াল ঘর তো ছিলোই। কোন রকম চিহ্ন ছিলো না। পোড়া মাটির উপর দাঁড়িয়ে আমার মা ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছেন। মা- বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আমার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেলো। দ্রুতই নিজেকে সামলিয়ে নিলাম।সব কিছু পুড়ে একটা উৎকট গন্ধ বের হচ্ছিলো।ধান গুলো পুড়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে ছিলো। ঘরের চার পাশের আম গাছ,নারিকেল গাছ, সুপারি গাছ, বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ গুলো পুড়ে বিবর্ন হয়ে গেছে। ঘরের টিন গুলো পুড়ে বাঁকা হয়ে পড়ে ছিলো। গ্রামবাসী কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আমাদের প্রতি তাদের যে ভালো বাসা দেখেছিলাম তা কখনো ভুলে যাবার নয়।
পাশের বাড়ী থেকে কে একজন একটা চেয়ার এনে দিলে বাবা সেখানে বসলেন। প্রথমেই আমাকে খোঁজলেন।আমি ঠিক আছি কি-না। বাড়ীতে একটা সুতাও আমরা কেউ নিয়ে যেতে পারি নাই। যার যার পরনে যা ছিলো তাই নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলো।
বাবার একটা বিশ্বাস ছিলো যে আমাদের বাড়ীতে আগুন দিবে না। কারণ নকলায় তখনকার সময়ে পাকিস্তানিদের পক্ষে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করে ছিলো নূর মোহাম্মদ ডাক্তার। তাকে বাবা আর জেঠা গোয়ালের গরু বিক্রি করে আর হাতে যা ছিলো সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলো যাতে আমাদের বাড়ী না পুড়ে। সেই কারণে কেউ কিছু নিয়ে বেড় হতে পারে নাই। দুপুর গড়িয়ে গেলো দেখতে দেখতে। দুপুরের পর আমার দুলাভাই (লাভা গ্রামের মরহুম আক্কাস আলী মাষ্টার ) গরুর গাড়ী নিয়ে এলেন মাকে নেওয়ার জন্য। মা বাড়ী ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না। অবশেষে বাবা বলে পাঠালেন। ( চলবে)