শেরপুর

শেরপুরে দশআনী নদীতে ব্রীজের অভাবে দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২০ মার্চ ২০২৩ , ৫:৫২ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরে দশআনী নদীতে ব্রীজের অভাবে দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ



শেরপুরে দশআনী নদীতে ব্রীজের অভাবে দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ
হাফিজুর রহমান লাভলু,শেরপুর:
শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ও পার্শ্ববর্তী জামালপুরের ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে দশআনী নদীর উপর একটি ব্রিজের অভাবে। বছরের অর্ধেক সময় বাশের সাকো ও অর্ধেক সময় নৌকায় কৃষিপণ্য আনা নেয়াসহ ওইসব মানুষকে চলাচলে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবার ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা আজো। তাই ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে কামারেরচর ইউনিয়ন ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বুক চিড়ে বয়ে গেছে দশআনী নদী। দশানী নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচরের ৬নংচর, নতুনপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, নয়াপাড়া, ভাটিপাড়া, উজানপাড়া, কামারপাড়া ও পার্শ্ববর্তী জামালপুরের ৪নং চর, আগরাখালি, বালুরচর, টুক্কারচর, টাবুরচরসহ ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ। ব্রক্ষপুত্র ও দশানী নদীর বন্যা থেকে রক্ষা করতে কামারেরচর বাজার ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ দেয়ার ফলে জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে কামারেরচরের ওই গ্রামগুলো।
গ্রামগুলোর ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে দশানী নদীর উপর বাঁশের ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো। এ অঞ্চলের মানুষ শুকনো মৌসুমে শত কষ্ট স্বীকার করে চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। শুধু দুর্ভোগই নয় এ সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রীর স্কুল ও কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। বিশাল চরাঞ্চলের শাক-সবজী, ধানসহ নানা ফসল আনা-নেয়াতেও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যও পায় না এলাকার কৃষকরা।
বারবার নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দেয় জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে আর কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনা। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দশআনি নদী পারাপার করতে হয় শিশু কিশোর, ছাত্র, বৃদ্ধ সবাইকে। আবার অনেক সময় সঠিক সময় রোগী হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অনেকেই। সময়মতো শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুলে। তাই এলাকাবাসী এ দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আমাদের এ ব্র‍িজটি যে কবে হবে, আমরা জানিনা। জন্মের পর থেকেই এরকমই দেখতাছি। সরকার সারা দেশেই উন্নয়ন করেছে। অথচ আমাগো অল্প একটু ব্র‍িজ করে দেয় না। খালি ভোটের সময় আসলে ভোট নেয়। ব্র‍িজ না থাকায় সরাসরি ফসল বাজারে নিতে পারি না তাই ফসলের ভালো দাম পাই না।
৬নং চরের মেহেদী হাসান পাপুল বলেন, আমরা এ ব্র‍িজের অভাবে সারাবছর দুর্ভোগের স্বীকার হই। আমাদের চরে প্রচুর সবজির আবাদ হয়। চরের এ সবজি সারাদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ব্র‍িজের অভাবে কৃষকরা সময়মত কোনকিছু বাজারে নিতে পারে না। ফলে কৃষিপণ্যের প্রকৃত দাম পায় না কৃষকরা। ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
৬নং চরের আব্দুর রশিদ বলেন, নদীর এপারে অনেক কৃষি পণ্যের আবাদ হয়। হাজার হাজার মণ বেগুন, পাট, গম, ধান নষ্ট হয়। কারণ যোগাযোগ ভালো না থাকায় পণ্য বাজারে তুলতে পারি না আমরা। তাই লাভবান হতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানাই।
কামারের চর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরশ বলেন, শুকনা মৌসুমে আমরা এই বাশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাই। এ সময় আমাদের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়। অনেক সময় নদীতে বই খাতা পরে ভিজে যায়। আর বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। ভয়ে একা নৌকা দিয়ে পার হতে পারি না। স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।
মোঃ হানিফ বিএসসি বলেন, আমি অনেক বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষকতা করি। নদী পারাপারের জন্য আমাদের নানা ধরনের অসুবিধা হয়। দেখা যায় আমরা সময়মত স্কুলে যেতে পারি না। বর্ষার সময় নদী পার হওয়ার জন্য বসে থাকতে হয়। এই ৬নং চরের দশআনি নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যোগাযোগ, ব্যবসা ও শিক্ষাব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে।
এ নদীতে শুকনো সময় পন্য আনা-নেয়ার একমাত্র বাহন গোড়ার গাড়ি আর বর্ষার সময় নৌকা। তাও পন্য পারাপার করতে হয় অনেক ঝুঁকিতে। পন্য পারা-পারের সময় অনেক সময় মারাও পড়ে ঘোরা।
সুমন মিয়া বলেন, খরান(শকনো) সময়ে আমরা অনেক কষ্ট করে গোড়ার গাড়ী করে মালামাল নদী দিয়ে পার করি। অনেক সময় ঘোড়া মাল নিয়ে আসার সময় পানির মধ্যে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। আমার গত দুই বছরে দুইডা ঘোরা মইরা গেছে। এরকম অনেকেরই একই অবস্থা।
এ বিষয়ে ১ নং কামারেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, দশআনি নদীতে একটি সেতু নির্মাণ মানুষের প্রাণের দাবি। স্থানীয় সরকার দলীয় এমপিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।
শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেরপুর সদরের দশআনি নদীতে সেতু তৈরির যাবতীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো।