দেশজুড়ে

অতীতের মামলা থেকে বাঁচতে আপন ভাগ্নেকে খুন, আদালতে স্বীকারোক্তি

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ , ৬:৫২ পিএম অনলাইন সংস্করণ

অতীতের মামলা থেকে বাঁচতে আপন ভাগ্নেকে খুন, আদালতে স্বীকারোক্তি।

শাহাদত তালুকদার,নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি: অন্যকে ফাঁসাতে ও অতীতের হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে নিজের ভাগ্নেকে খুন করে শেষ রক্ষ হলো না যোগানিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান হবির। নিহতের মামা হাবিবুর রহমান হবি’র(৫৫) পরিকল্পনায় ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬) ভাতিজা মোস্তফা (৩০) মিলে এমন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

বিগত ২০১৯ সালের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে যোগানিয়া ভাইটকামারী এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান হবি ও একই এলাকার মোঃ ফজল রহমানের সাথে বিরোধ হয়। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে মোঃ ফজল রহমানের পুত্র ইদ্রিস আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় নিহতের পিতা ফজল রহমান বাদী হয়ে হাবিবুর রহমান হবি সহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীতে আদালত থেকে মামলাটি বিচারাধীন হওয়ার পর তার জেল হয়। এবং একটা সময় জামিনে বের হয় এবং পুনরায় এলাকায় তার আধিপত্য তৈরিতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার বিরোধী পক্ষের সাথে কোনোভাবে পেরে উঠতে না পারায় বিভিন্ন সময় নানান পরিকল্পনা করেন। একটা সময় তাদের মাথায় পরিকল্পনা আসে ফজল রহমানের সাথে জমি বিরোধ শাহ কামাল কদিকে হত্যা করে ফজলকে ফাসিয়ে দেওয়ার। এরপর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নিহত শাহ কামাল কদি’কে বলির পাঠা বানায় তারা। ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে জমিতে সার দেওয়ার জন্য শাহ কামালের ১৫০০ টাকার প্রয়োজন হয়। পরবর্তীতে সেই টাকা সারোয়ার রহমান শান্ত’র কাছে হাওলাত চায় তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টায় মোস্তফা গড়াকুড়া মসজিদ বাজারে নিহত শাহ কামালকে দেখতে পেয়ে টাকার জন্য সারোয়ার জাহান শান্ত’র কাছে পাঠায়। এবং তা ততক্ষণে মোস্তফা ফোন করে সারোয়ার জাহান শান্তকে বলেন যে শাহ কামালকে পাঠাইলাম তোর কাছে এবং আমি একটু পর আসছি। তারপর  হাবিবুর রহমান হবি’র পুরাতন একটি ঘরে শান্ত ও রহুল শাহ কামালের সাথে হাওলাত টাকা নিয়ে কথা বলতে থাকেন। তারপর মোস্তফা উরফে মস্তু পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর হবির ঘরে আসে। এরপর আবার মোস্তফা সিগারেট আনতে পাশেই আলমের দোকানে যায়। কিছুক্ষণ পর যখন পুনরায় মোস্তফা ওই ঘরে যায় তখন দেখে রহুল শাহ কামালের মুখ চেপে ধরে রেখেছে অন্যদিকে সারোয়ার জাহান শান্ত দুই উরু চেপে ধরে রেখেছে। এমন অবস্থায় মোস্তফা ওই ঘরের দরজার পাশে টেবিলে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে শাহ কামালের পেটে কেচা দেয় এরপর গলা কেটে শাহ কামালের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এবং পরবর্তীতে প্রমাণ লুকানোর জন্য ওই ঘরের মেঝেতে থাকা রক্ত গেন্জি দিয়ে পরিষ্কার করে সেই রক্তমাখা গেন্জি টিওবয়েলে ধৌত করে। এরপর নিহত শাহ কামালের মরদেহকে মোস্তফার কথামতো সারোয়ার জাহান শান্ত ও রহুল মিয়া সারের বস্তায় ভরে কম্বল দিয়ে পেচিয়ে ঘরে থেকে সারোয়ার জাহান শান্ত কাধে করে ভাটকামারীর কুত্তামারা সোহরাব আলীর বাড়ীর পিছনে লিলু খালের পাড়ে ফেলে দেয় এরপর রক্তমাখা বস্তা ও কম্বল বাড়ীর পাশে বাশঝাড়ে পুড়িয়ে  যার যার মতো বাড়ীতে চলে যায়। এমন চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মোচন করে ২৭ জানুয়ারি বিকাল চারটা নালিতাবাড়ী থানায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও নালিতাবাড়ী সার্কেল  মোঃ দিদারুল ইসলাম ও থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুল আলম ভূইয়া সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরেন। 

গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ১১টায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী  উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের ভাইটকামারী কুত্তামারা এলাকার স্টিলের ব্রীজের হরেখালি নামক খালের পাড়ে ঝোপঝাড়ের ভিতরে এক গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পায় এক যুবক। পরবর্তীতে ফোন করে পুলিশকে তা জানালে ঘটনাস্থল থেকে এই মরদেহ উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ।নিহত শাহ কামাল উরফে কদি (৩৫) অত্র যোগানিয়া ইউনিয়নের ভাইটকামারী এলাকার মৃত জবেদ আলীর পুত্র। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। 

এই হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম। সেইসাথে এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে সিআইডি বিভাগ সহ অন্যান্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছিলেন।

এ হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য সন্দেহজনক ভাবে কৌশলগত জিজ্ঞাসাবাদে নিহত শাহ কামালের মামা সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি(৫৫) ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুন(৪২), পুত্র সারোয়ার জাহান শান্ত(২৬), ভাতিজা মোস্তফা(৩০) ও রাহুলসহ(২২) হারেজ আলী এই ৬ জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

এরপর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে।

প্রমাণ সহ নিশ্চিত হয়ে শনিবার(২৭ জানুয়ারি) তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় জড়িত তিনজন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন।