দেশজুড়ে

৯ কোটি টাকা নিয়ে ‘উধাও’ রেঞ্জ কর্মকর্তা

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ১২ জুন ২০২৪ , ১:৫৮ পিএম অনলাইন সংস্করণ

৯ কোটি টাকা নিয়ে ‘উধাও’ রেঞ্জ কর্মকর্তা

মেহেদী হাসান শামীম,
শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর বন বিভাগের বালিঝুড়ি রেঞ্জের সরকারি রাজস্ব খাতের প্রায় নয় কোটি টাকা জমা না করে উধাও হয়েছে রবিউল আলম নামে এক রেঞ্জ কর্মকর্তা। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই রেঞ্জ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন সদস্য করে পৃথক দুটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই কমিটি মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

বন বিভাগ ও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেরপুর জেলা বন বিভাগের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ এর আওতায় সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ২ শতাধিক সামাজিক বনায়নের বাগান টেন্ডারের মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। সরকারি আইন অনুযায়ী বাগান বিক্রিত অর্থ ঠিকাদার কর্তৃক সরকারি কোষাগারে (রাজস্ব খাতে) জমা দিয়ে গাছ কাটার অনাপত্তি পত্র নিয়ে বাগান কেটে নেবেন। পরবর্তীতে জমাকৃত টাকা থেকে বন কর্তৃপক্ষ বিকৃত মূল টাকার ৪৫ ভাগ অংশীদারি জনগণকে যার যার অংশ চেকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিবেন।

ঠিকাদাররা রেঞ্জার রবিউল এর হাতে নগদ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তারা তাদের নির্ধারিত বাগান থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। কিন্তু রেঞ্জার রবিউল ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এমনকি অনেক ঠিকাদারের নগদ প্রাপ্ত টাকার কোনো রশিদও দেয়নি। তবে তারা ওই রশিদের জন্য দিনের পর দিন রেঞ্জ অফিসে ঘুরছিলেন। এদিকে সামাজিক উন্নয়নের উপকারভোগীরাও তাদের প্রাপ্য গাছ বিক্রি করার ৪৫ ভাগ টাকার কোনো চেক না পেয়ে তারাও হন্যে হয়ে ঘুরছেন রেঞ্জ অফিসে। সূত্র জানিয়েছে, ওই রেঞ্জ কর্মকর্তা ঠিকাদারের কাছে থেকে নির্ধারিত টাকা ব্যক্তিগতভাবে জমা নিয়ে গাছ কাটার মৌখিক অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তা পরবর্তীতে সরকারি তহবিলে জমা দেননি।

জানা গেছে, বিগত চার বছর ধরে রেঞ্জার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর গেল চলতি বছরের গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি জামালপুরে বদলী হন। এর আগের দুই বছর তিনি ওই রেঞ্জেই দুই বছর বিট কর্মকর্তা হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।

এদিকে রেঞ্জার রবিউল ইসলাম বদলী হওয়ার পর বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আসলে নড়েচড়ে বসে বন বিভাগ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্তের বিষয় চলমান থাকায় তদন্ত কর্মকর্তারা কোনো তথ্য না জানালেও অপর একটি সূত্রে জানা গেছে ৯ কোটি টাকার হিসেব গরমিল ও রাজস্ব খাতে টাকা জমা না হওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কমিটি।

এদিকে অংশীদারি-ত্বের টাকা না পেয়ে প্রায় প্রতিদিনই বালিঝুড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী শত শত নারী পুরুষ এসে ভিড় করছে তাদের হিস্যা পাওয়ার জন্য। গত ৭ জুন বালিজুরি রেঞ্জ কার্যালয়ে ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ে এক তদন্ত কমিটি তদন্তে আসলে ভুক্তভোগীরা তাদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত রবিউল আলম ঠিকাদার সিন্ডিকেটের একটি বড় অংশের সঙ্গে গোপনে অংশীদার ছিলেন। ওই সিন্ডিকেটকে কাজ পাইয়ে দিয়ে মিলেমিশে সরকার ও প্রকল্পের অংশীদার সাধারণের টাকা তছরুপ করেছেন। এখানে চাকরিকালীন সরকারি দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে মহা দাপটে চাকরি করেছেন। কেউ কিছু বললেই মামলা-হামলা করে ঠাণ্ডা করেছেন।

প্রকল্পের ভুক্তভোগী উপকারভোগীরা বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে বাগানে পাহারা দিয়েছি। টাকা ও শ্রম খরচ করে আশায় বুক বেধে আছি টাকা পাব বলে। বাগান বিক্রি হলেও টাকা পাইনি। অনেক ঘুরেছি ওই কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে। ভয় ও অভয় দুটোই দিয়েছেন কিন্তু টাকা পাইনি আজও। সরকার ওই কর্মকর্তার শাস্তি দিবে কী না তা আমাদের দেখার বা জানার বিষয় নয়। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা পেলেই খুশি।

অভিযুক্ত রেঞ্জার রবিউল আলম এর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় আছেন তারও কোনো খোঁজ মেলেনি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এই রেঞ্জের বর্তমান রেঞ্জার সুমন মিয়া জানায়, বিষয়টি এখন তদন্তাধীন তাই এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও তদন্ত কমিটির কথা স্বীকার করে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম বলেছেন, টাকার গরমিল আছে। তবে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আর মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফোন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ জানায়, আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত রেঞ্জারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ৯ কোটি টাকার হিসাব গড়মিল পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে সব কিছু প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।