শেরপুর

প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চায় শেরপুরের মনোয়ারা

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৬ জুন ২০২২ , ৫:৩৯ পিএম অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চায় শেরপুরের মনোয়ারা



প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চায় শেরপুরের মনোয়ারা
হাফিজুর রহমান লাভলু, শেরপুর :
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম ওরফে বানেছা বেগম (৭০) প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চায়।
মনোয়ারা বেগম ১৯৬৬ সালে মৃত হাফিজ উদ্দিন ওরফে বাসু মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের আট বছর পরেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মনোয়ারার স্বামী হাফিজ মারা যায়। স্বামী মৃত্যুর পর এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি মনোয়ারা।
অভাবের সংসার চালাতে গিয়ে কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন, আবার কখনো বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পণ্য (সাবান, তেল, বিস্কুট, চানাচুর) বিক্রি করেছেন।মেয়ে বড় হওয়ায় বিয়ে দিয়েছেন ও ছেলেকে করিয়েছেন বিয়ে। ছেলের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পান। টাকা-পয়সা না থাকায় চিকিৎসার অভাবে পুঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। সংসারে একের পর এক পরিবারের সদস্য বেড়ে যায়। পরিবারের চাহিদা ও বাসস্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার স্বামীর বসতভিটা বিক্রি করে দেন ছেলে মহির উদ্দিন।
মনোয়ারা বর্তমানে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা ধানশাইল ইউনিয়নের দাড়িয়ারপাড় এলাকার কাহিলাকুড়া বিলের এক কোণায় গড়ে তোলেছেন বসতভিটা। ওই ভিটায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি দু’চালা টিনের ঘরের এক রুমে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, অপর এক রুমে থাকেন মনোয়ারার নাতি। আর মনোয়ারা বাস করেন ছনের একটি ঘরে। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বসত ঘরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আসলেই পানি পড়ে ঘরের মধ্যে।আর তখন নাতির ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় মনোয়ারাকে।
মনোয়ারা জানান, দিন মজুর ছেলে খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। প্রায় সময় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয় তাকে। বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডও নেই তার। এর মধ্যে আবার বসতঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। টাকার জন্য ঘরটি ঠিকও করতে পারছেন না। বৃষ্টি হলে নাতির ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে।
সরকারের কাছে নতুন করে একটি ঘরের দাবি জানিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘একটি ঘর পেলে আমার থাকার কষ্ট দূর হবে, আমি প্রধান মন্ত্রীর কাছে একটি ঘর ভিক্ষা চাই।’
মনোয়ারার ছেলে মহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার মায়ের পা ভেঙে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। সবসময় পায়খানা-প্রসাব করে, তাই ভাঙা-চোরা ঘরেই থাকেন। হাতে টাকা-পয়সা নাই, ঘর মেরামত করতে পারছি না। তবে বৃষ্টি হলে আমার ছেলের ঘরে রাত্রি যাপন করেন মা। আমার যে অবস্থা, তাতে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। সরকারের সহযোগিতায় একটি বসত ঘর পেলে অনেক উপকার হবে। আমার মায়ের জন্য সরকারের কাছে একটি বসত ঘর চাই।’
স্থানীয় শিক্ষক মো. হানিফ উদ্দিন বলেন, মনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করেন। তার ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো না। মনোয়ারার বসতঘরটি বসবাস অনুপযোগী। সরকারিভাবে যদি মনোয়ারার জন্য একটি ঘর দেওয়া হয়, তাহলে ওই বিধবা নারী একটু শান্তিতে থাকতে পারবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘সরকার এমন অসহায় লোকই খুঁজছে। তার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। এমন অবস্থার কথা জানতে পারলে, অনেক আগেই খোঁজ নিয়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’