শেরপুর

শেরপুরে নৃ-জনগোষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে মানববন্ধন

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ৯:২৮ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরে নৃ-জনগোষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে মানববন্ধন



শেরপুরে নৃ-জনগোষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে মানববন্ধন
শেরপুর প্রতিনিধি : 
শেরপুর জেলায় বসবাসরত সকল নৃ-জনগাষ্ঠির মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার দাবীতে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক উদযাপন উপলক্ষে নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর ও ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এবং সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ আয়োজনে শহরের চকবাজার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার চত্বরে এ মানববন্ধন কমসূচি পালিত হয়। এতে গারো, কোচ, হাজং, বর্মন, বানাই, ডালু, হদি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনীতিক ও সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে ৫ দফা দাবী সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। স্মারকলিপিতে সকল নৃ-জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আদিবাসী শিক্ষক সংকট দূরীকরণ এবং জেলায় নৃ-জনগোষ্ঠির একটি কালচারাল একাডেমী স্থাপনের দাবী জানানো হয়। মানববন্ধন চলাকালে শ্রীবরদী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমার সভাপতিত্বে শিক্ষাবিদ শিব শংকর কারুয়া, কবি জ্যোতি পোদ্দার, নারী নেত্রী আইরীন পারভীন, সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সহমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন ঝিনাইগাতী টিডাব্লিওএ চেয়ারম্যান নবেশ খকশী, জেলা কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন সভাপতি রয়েল কোচ, বর্মন নেতা শিক্ষক হিরন চন্দ্র বর্মন, সুমন্ত বর্মন, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সোলায়মান আহমেদ, নৃত্যশিল্পী কমল পাল, পুরোহিত কমল চক্রবর্তী, উদীচী সহ-সভাপতি এস.এম. আবু হান্নান, যুব নেতা শুভংকর সাহা, পবিত্র বর্মন প্রমুখ। 
বক্তারা বলেন, দেশে বসবাসকারী সকল আদিবাসীদের ভাষা রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। যেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠির ভাষা প্রচলিত আছে কিন্তু নিজস্ব বর্ণমালা নেই, তাদের বর্ণমালা উদ্ধার ও লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠির নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। আদিবাসী এলাকায় মাতৃভাষায় পাঠদানের উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল এম. সাংমা বলেন, বাঙালী ছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমতল ও পাহাড় মিলিয়ে প্রায় ৪৫ টিরও অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। দেশে বসবাসরত প্রতিটি আদিবাসী জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা থাকলেও তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ভাষারই নেই নিজস্ব বর্ণমালা। লিখিত রূপ না থাকায় তাদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হচ্ছে কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে। শিক্ষার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে নিজস্ব ভাষার বিষয়টি যুক্ত। মাতৃভাষা মানুষের আত্মবিকাশের পথ সম্প্রসারিত করে। একজন আধুনিক মানুষকে আরো দক্ষ ও যোগ্য করে তোলে।
জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠী নানা কারণে নিজেদের মধে গুটিয়ে গেছে। কখনো বা বিসর্জন দিয়েছে আত্মপরিচয়, নাম, গোত্র, এমনকি ধর্মবিশ্বাস পর্যন্ত। অধিকারবঞ্চিত এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অনেকে বর্ণহীন বলেই তাদের জীবনের সুমহান বাণী মাতৃভাষায় লিপিবদ্ধ হয়নি। তাই তারা আজ বিলুপ্তির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, তারা যেন নিজভূমে পরবাসী। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি। অথচ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার। যেকোনো মূল্যে সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যে চেতনায় আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর কথা বলি, একই চেতনায় বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষার কথাও বলতে হবে।
আইপি ফেলো সুমন্ত বর্মন বলেন, বর্তমান সরকারের দুরদর্শী নেতৃত্বের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠির নিজেদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রি-প্রাইমারী পর্যায়ে ৫টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে পাঠদান কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু যেসব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে, সেসব পাঠ্যপুস্তক পড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এলাকায় গারোরা রোমান হরফে তাদের বর্নমালা তৈরী করেছে। কোচ, হাজং, ডালু জনগোষ্ঠির ভাষা থাকলেও কোন বর্ণমালা নেই। যে কারণে এইসব ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে।