শেরপুর

শেরপুরের জগৎপুরে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও অরক্ষিত শহীদদের গণকবর

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ২৭ মার্চ ২০২৩ , ৩:৩৬ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরের জগৎপুরে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও অরক্ষিত শহীদদের গণকবর



শেরপুরের জগৎপুরে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও অরক্ষিত শহীদদের গণকবর
শেরপুর প্রতিনিধি:
১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর জগৎপুর গ্রামে চলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। পাকবাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা নির্বিচারে গুলি করে ৪২ জন হিন্দু পরিবারের সদস্যসহ মোট ৫৮ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। আহত হয় প্রায় অর্ধশত মানুষ, জ্বালিয়ে দেয়া হয় ২ শতাধিক বাড়ি-ঘর। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও ওই গ্রামে এখনও নির্মিত হয়নি শহীদদের স্মরণে কোন স্মৃতিসৌধ। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর।
জানা যায়, জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রাম। সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ, ৩০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ৮টা। জগৎপুরের সামনের শংকরঘোষ গ্রাম থেকে স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাক বাহিনী জগৎপুর গ্রামকে তিন পাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে চালায় নির্বিকার হত্যাযজ্ঞ। ওইসময় গ্রামবাসী কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই জীবন বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকের রঙ্গবিলের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকে। কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরিয়ে আবার কেউ বিলের ২ পাড় ঘেঁষে পালাতে গেলে পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন ৩৫ গ্রামবাসী। শুধু গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুঁড়িয়ে ছাই করে দেয়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে যাওয়ার পর কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ি-ঘর পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই অবস্থা দেখে অনেকেই চলে যায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে। আবার অনেকেই রয়ে যায় গ্রামেই। পরে হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের মরদেহ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও ওই গ্রামে এখনও নির্মিত হয়নি শহীদদের স্মরণে কোন স্মৃতিসৌধ। এখনো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের গণকবর। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী ভুবল চন্দ্র দে বলেন, আমার ক্ষেতে আমি কাজ করতে ছিলাম, হঠাৎ করেই আক্রমণ করে পাকবাহিনী। পরে তারা গুলি করে হত্যা করে অনেক নীরহ মানুষকে। দেশ স্বাধীনের এতদিন পরও আমাদের কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। আমাদের গ্রামে এসবের কোন চিহ্নও নেই, তাই আমরা দাবি করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে সরকারিভাবে কিছু নির্মাণ করা হোক। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলেন, সেদিন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনীরা। এতদিন হয়ে গেলো, এখানে একটা তালিকাও তৈরি করে দিতে পারেনি কেউ, এটা আসলেই খুবই দুঃখজনক।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, আমাদের ব্যর্থতার কারণে স্বাধীনতার এত বছর পরও জগৎপুরে আজও কোন স্মৃতিচিহ্ন তো দূরের কথা, শহীদদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়নি। ৫ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে জগৎপুরে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও সেটি কি অবস্থায় আছে তা জানা নেই। তবে আমি শীঘ্রই শহীদের তালিকা তৈরি করে ও একটি নামফলকের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করবো।
এ বিষয়ে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, জগৎপুর গ্রামে বেসরকারিভাবে একটি স্মৃতিফলক তৈরির উদ্যোগের কথা শুনেছি। তারপরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে একটি উদ্যোগ নেয়া হবে। যাতে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ এবং শহীদদের নামের তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।