শেরপুর

“বঙ্গবন্ধু হত্যায় প্রতিরোধে নকলা- নালিতাবাড়ী”আলহাজ্ব সরকার গোলাম ফারুক

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৮ অগাস্ট ২০২৩ , ১২:০১ এএম অনলাইন সংস্করণ

“বঙ্গবন্ধু হত্যায় প্রতিরোধে নকলা- নালিতাবাড়ী”আলহাজ্ব সরকার গোলাম ফারুক



“বঙ্গবন্ধু হত্যায় প্রতিরোধে নকলা- নালিতাবাড়ী।” 
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ উল্টো পথে চলতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের গগণবিদারী “জয়বাংলা” শ্লোগানকে বাংলাদেশ জিন্দাবাদে পরিণত করা হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামীদের মাফ করে দেয়। যুদ্ধাপরাধী ও কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে। ইনডেমনিটি আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়।
 বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দেয়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ করতে জাতীয় মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে শেরপুরের নালিতাবাড়ী- নকলা উপজেলার প্রায় ৩৫০ এর মত আওয়ামী প্রেমী মুজিববক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ভারতের মেঘালয়ে আশ্রয়গ্রহণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দেয়। আমি তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্র। প্রতিদিন দলবেঁধে গ্রামের মানুষ আব্দুল হালিম সরকার আমার চাচার ঘরে বিবিসির সংবাদ শোনার জন্য ভীড় করতেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি মানুষের আবেগ,ভালোবাসা ও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সে-সময় স্বচক্ষে দেখেছি। কত মানুষকে যে চোখের পানি গামছা দিয়ে মুছতে দেখেছি তার শেষ নেই। 
আমার ছোট চাচা নূর হোসেন চেয়ারম্যান জাতীয় মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং সাংগঠনিক দায়িত্বসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করতেন। নালিতাবাড়ীর আব্দুল হালিম উকিল,মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল,হাবুল দত্ত, সুধাংশু কালোয়ারও জাতীয় মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। নকলার জিন্নাহ ভাই,রব্বানী কাকা,সুশীল দা,বাহাদুর শাহ এবং নালিতাবাড়ীর চন্দন দা,হায়দার আলী মাস্টার,বদ্ধনাথ কর,গোরাঙ্গ পাল,গোপাল অধিকারী,সনজিত পাল,জসিম ভাই,নজরুল ভাই,ফজল ভাই,বদিউজ্জান,সাজু ভাই,আঃ হাই,মোফাজ্জল ভাই,মুনছুর কাকা,আজগর আলী সহ অনেকেই ভারতের মেঘালয় সিমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের ভূখন্ড দখল করে প্রতিরোধে ঝাপিয়ে পড়েন। 

এদের মধ্যে অনেকেই আমাদের বাড়িতে গেছেন,অস্ত্র লুকিয়ে রেখে রাত্রি যাপন করেছেন এবং খাওয়া দাওয়া সেরে আবার সিমান্তে চলে গেছেন। এই বাহিনীর কাছে আমাদের বাড়ীটি ছিল সেভ জোন। এই বাহিনী ছাড়া সেসময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করার সাহস কারোর ছিলনা। এদের জাতীয় মুক্তিবাহিনীর স্বীকৃতির দাবিটি সরকারের গভীরভাবে তলিয়ে দেখা উচিত বলে মনেকরি।

জাতীয় মুক্তিবাহিনীর সাথে গোপন যোগাযোগ থাকার কারণে আমাদের ইউনিয়নের কাদির চেয়ারম্যান সাহেব জামালপুরের আর্মি ক্যাম্পে আমার চাচা নূর হোসেন চেয়ারম্যান সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যে কারণে জামালপুর ক্যাম্প থেকে আর্মির একটি সুসজ্জিত বাহিনী নকলার সুশীল দাকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। রাত গভীর হওয়ায় ভুল করে সুশীল দা প্রথমে উত্তর নিজপাড়া চলে যান। সূর্যোদয়ের পর সুশীল দা যখন বল্লেন এবাড়ী নয় তখন তাকে চার্জ করা হয় এবং সকাল ৮ টার দিকে নিজপাড়ায় আমাদের বাড়ী ঘেরাও করা হয়। সেখানে সারাদিন তল্লাশি চালিয়ে কিছু না পেয়ে আমার পিতা মরহুম আব্দুল হাকিম সরকার( প্রাক্তন এমএলএ ও এমএনএ) ও বড়ভাই এএইচএম মোস্তফা কামালকে গ্রেফতার করে জামালপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। 

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হাকিম সরকার ও তার বড় ছেলেকে গ্রেফতার করার পর এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সারাগ্রাম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এসে আহাজারি করতে থাকেন। মা,চাচী,ফুফু,ভাইবোনসহ বাড়ীর লোকজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে যায়। আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মাথায়। খাসী গরু সদকা করে গরীবদেরকে বিলিয়ে দেয়া,মিলাদ পড়ে দোয়ার আয়োজন করা, এরমধ্যে কেউ কেউ ডুকরে কেঁদে উঠে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়া,এ যেন অমাবশ্যার অন্ধকার। আর্মির ক্যাম্প থেকে বাবা ও মোস্তফা ভাইকে বের করা,চেয়ারম্যান কাকুকে মামলা থেকে মুক্ত করা নিয়ে গভীরভাবে আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। 

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে একটা কঠিন দুঃসময় আমাদের উপর ভর করেছিল। কোথায় যাবো,কি করবো ভেবে পাওয়া যাচ্ছিলোনা। সে-সময় রাত্র হলেই আওয়ামীলীগের নেতাদের ভীড় বাড়তে থাকতো আমাদের বাড়ীতে আবার অনেক নেতা আত্নগোপনে চলে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে কেউ কেউ সাহায্য করেছেন বটে কিন্তু জামালপুর আর্মি ক্যাম্পে যোগাযোগ করার কোন সাহসী লোক পাওয়া যাচ্ছিলোনা। কে যাবে ওখানে যদি তাকেও গ্রেফতার করা হয়! এজাতীয় অনেক সমাধান ছাড়া প্রশ্নের জন্ম হতে লাগলো। আমি ক্রন্দনরত অবস্থায় বারবার মাকে প্রশ্ন করেছি বাবা ও মেভাইকে আর্মিরা ছাড়ছে না কেন?

এসময় জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যাপক আলতাফ হোসেন স্যার বাবা এবং মোস্তফা ভাইয়ের গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে আর্মি ক্যাম্পে মেজরের সাথে দেখা করেন। এম.এল.এ হাকিম সরকার ও তার বড় ছেলের আর্মি ক্যাম্পে অকথ্য নির্যাতনের শিকারে আলতাফ স্যারও কেঁদেছিলেন। আর্মির মেজর আলতাফ স্যারের পরিচিত হওয়ায় এবং আলতাফ স্যার বাবার ছাত্র হওয়ায় সে যাত্রায় জামিন সম্ভব হয়েছিলো। ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় গুলো আওয়ামীলীগের জন্য ছিল খুবই দূর্বিষহ। শুধু আমার পরিবার নয় অসংখ্য আওয়ামী পরিবার জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

ধন্যবাদ
আলহাজ্ব সরকার গোলাম
ফারুক 
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগ । 
সাবেক সদস্য,শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগ। 
সদস্য, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগ।    
….