শেরপুর

শেরপুরে ফিলিপাইনের আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ, সল্প খরচে অধিক ফলন।

  স্বাধীন বাংলা নিউজ ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ৬:৫১ পিএম অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরে ফিলিপাইনের আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ, সল্প খরচে অধিক ফলন।

শেরপুরে ফিলিপাইনের আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ, সল্প খরচে অধিক ফলন।
শেরপুর প্রতিনিধি :
প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস আখের রস প্রাণে তৃপ্তি আনে। ফলে গরমকালে আখের চাহিদা অনেক গুন বেড়ে যায়। চিনির জন্য আখের চাহিদা সবসময় থাকলেও গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কারণ গরমে আখের মিষ্টি ও সতেজ রস। আখের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
সল্প খরচে অধিক ফলন, ওষুধিগুন, দেশীয় আখের চেয়ে মোটা, অধিক রসালো এবং দ্বিগুন লম্বা ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার জাতের বা কালো রঙের আখ সম্প্রতি বাংলাদেশে গবেষনা পর্যায়ে থাকালেও শেরপুরে এ আখ চাষে ব্যপক আগ্রহ স্মৃষ্টি হয়েছে কৃষদের মাঝে।
ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা বিভাগ শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে চাষাবাদ শুরু করলেও মাত্র ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এ আখ পরিপক্ক হওয়ায় এবং রসালো ও প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে এ আখ চাষে ব্যপক আগ্রহ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ফিলিপাইনের কালো রঙের বা ব্ল্যাক সুগার শুধু গরমে তৃপ্তিই নয় এর রয়েছে অনেক ওষুধিগুণ। মুখে ব্রন উঠা, মুখের উপর বলি রেখা দূর করে এ আখের রস। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভাল জাতের আখ হলো এই ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ। বাজারে যেসব আখ পাওয়া যায় অনেক সময় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি কম ও রস কম থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের এ আখ সেই দিক দিয় বেশ ভালো জাতের আখ। এ আখের মিষ্টতা অনেক বেশি ও নরম থাকায় বৃদ্ধ ও শিশুরা এই আখ অনায়াশেই চিবিয়ে খেতে পারে। এর খোসা হাতের আঙ্গুল দিয়েও ছাড়ানো যায়। বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিলিপাইন ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই শেরপুরে এ ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের আখ চাষ বানিজ্যিকভাবে শুরু করার চিন্তা ভাবনা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের ঢাকায় একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার গ্রামের বাড়িতে গত বছর থেকে তার নিজস্ব ৫০ শতক জমিতে এই ফিলিপাইনের ব্ল্যাক জাতের প্রায় ১২ হাজার চারা রোপন করে। বাজারে দেশীয় যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো সাধারণত সবোর্চ্চ ১০ ফিট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুন হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ফুট। এ আখের নানা গুনের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটা চারার গোড়া থেকে আরো প্রায় ১০ থেকে ১৫টি চারা গজায় এবং প্রতিটা গাছ লম্বা হয় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ফুট। সার-পানি খুব বেশী প্রয়োজন হয়না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। এক বার এ চারা রোপন করলে পরবর্তি ৩ বছর আর নতুন করে রোপন করার প্রয়োজন হয়না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে উঠে এবং তার থেকে পরবর্তি বছরে আবারও ফলন পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রতিটি আখ থেকে প্রায় ৩ কেজি রস বের করা যায়। যা দেশীয় আখ থেকে সম্ভব নয়। বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে বেশি। প্রতিটা আখ ১০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। তাই আশপাশের অনেকেই এ আখ ক্ষেত দেখতে আসছে এবং এ আখ চাষের চিন্তাও করছে কেউ কেউ। শ্রীবর্দীতে ওই চাষির আখ দেখে ইতিমধ্যে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে পাশ্ববর্তী মালাকুচা গ্রামে এক কৃষক প্রায় এক একর জমিতে আবাদ শুরু করেছে। এছাড়া শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের মাছপাড়া গ্রামের তালুকদার এগ্রো নামে এ কৃষি খামারে প্রায় এক একর জমিতে এর আবাদ শুরু করেছে। তিনিও পরীক্ষামূলক ভাবে অল্প কিছু চারা রোপন করে ফলন ভালো পেয়ে এবার বেশী করে আবাদ শুরু করে।
আখ চাষি রহিম মিয়া জানায়, ফিলিপাইন এ আখের চারা তিনি রাজশাহী থেকে নিয়ে আসে। এরপর তার ক্ষেতের পরিপক্ক আখ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেছে। এ আখে পোকা মাকড় বা রোগ বালাই নেই বললেই চলে। শুধু সামান্য কিছু সার এবং সুষ্ক মওসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিষ্কার ও চাষ পদ্ধতির নিয়মনিতি মানলে এ আখ পরিপক্ক হতে সাধারণত ৮ থেকে ১০ মাস মাস সময় লাগে এবং উচ্চতাও অনেক বেশি হয়।
তিনি জানান, এ আখ ক্ষেতের পুর্নাঙ্গ আখের চেয়ে এর চারার বেশ চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে সে তার আখ গাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছে। আর প্রতিটা আখ ১ শত টাকা করে প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছে। রোকেয়া-নবাব এগ্রো ফার্ম নামে একটি অনলাইন পেইজ খোলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারার অর্ডার পাচ্ছে। বর্তমানে অর্ডার রয়েছে আরো ১৫ হাজার চারা।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানায়, ফিলিপাইনের এ ব্ল্যাক সুগার জাতের আখটি এখনও গবেষণা পার্যায় থাকলেও এর ফলনে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি ১৯১৮ সাল থেকে নটিফাইট ক্রপ হিসেবে গবেষনা চলছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সল্প পরিষরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এর গবেষনার ডাটা হাতে আসলে এবং ভ্যারাটি জাচাই বাছাই শেষে বানিজ্যিক ভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে তখন কৃষকরা অধিক লাভের এ আখ চাষে আরো বেশী আগ্রহ হয়ে উঠবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবে।